সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি, কালের খবর :
সীতাকুণ্ড পৌরসদরের আহছানুজ্জামান শপিং কমপ্লেক্সে আওয়ামী নেতা বেলাল হোসেনের আগ্রাসন, ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ইসমাঈল হোসেন সেলিম ও তার পরিবার। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর বারোটায় সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এসময় তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ছেলে মোহাম্মদ ইসলাহ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে থানা, ভূমি অফিস, ইউএনও কার্যালয়, সেনাবাহিনীর কাছে বেলালের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। চাঁদাবাজি ও ভাঙচুরের ঘটনাকে আড়াল করতে গতকাল বেলাল উদ্দেশ্য প্রণোণিত, ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও দূরভিসন্ধিমূলক সংবাদ সম্মেলন করে। আহছানুজ্জামান শপিং কমপ্লেক্সের মালিক পক্ষের পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক সুনাম বিনষ্ট ও হেয় প্রতিপন্নের প্রতিবাদে বাধ্য হয়ে আমরা আজকের এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করি।
বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক জীবনে শহীদ প্রেসিডেন্ট রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের একজন সৈনিক এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন তৃণমূলের কর্মী। জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রদলে রাজনীতিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে আমার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। জীবিকার তাগিদে আমি ১৯৯৩ সালে মালেশিয়া গমন করি এবং দীর্ঘ দিন প্রবাস জীবন অতিবাহিত করি।
তিনি বলেন, কলেজ রোড়স্থ আহছানুজ্জামান শপিং কমপ্লেক্স আমাদের মালিকাধীন ২ শতক জমি এবং আমাদের দক্ষিণপাশে অবস্থিত সীতাকুণ্ড গণশৌচাগারটি ১ শতক জমিতে গড়ে ওঠে। আমি অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলতে চাই। অতীতে এই গণ শৌচাগারটিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বর্ণালী ক্লাব, নুর সেন্টার ও আহছানুজ্জামান শপিং কমপ্লেক্স এই তিনটি মার্কেটের নিজস্ব পথ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আমাদের সরলতা ও মানবিক মূল্যবোধকে দূর্বলতা মনে করে বাকি দুটি মার্কেট নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে যাতায়াতের সকল পথ বন্ধ করে দেয়। এমনকি স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী ও একটি কুচক্রী মহল আমাদের উপর বল প্রয়োগ করে এবং রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি প্রদর্শন করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শৌচাগার দ্বিতল ভবনে রুপান্তর করে। পরবর্তীতে বাজার কমিটি তাদের দাপ্তরিক কার্যালয় গড়ে তোলে। সেই স্বার্থনেষী মহল হাঁটার জন্য যে গলি ব্যবহার করে সেটিও আমাদের মালিকাধীন। এমনকি আমাদের সেফটি ট্যাংকটিও তাদের দখলে।
ভবনের উপরে চারটি ছাদ আমাদেরই। অথচ আমাদের সাথে কোনো প্রকার সমঝোতা না করেই তারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক দূর্বাত্তায়নের মাধ্যমে সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গণ শৌচাগারটিতে পরিবেশগত দিক উন্নত না করায় দূর্গন্ধ ও অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের মার্কেট ও আশেপাশের মার্কেটগুলোতে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। যা পরিবেশ আইনের লঙ্গন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে আমরা মার্কেটের নির্মাণ কাজ করতে গেলে দোকান আওয়ামী নেতা বেলাল হোসেন তার দলবল নিয়ে আমাদের কাজে বাধা দেয়। সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে পরিচিত বেলাল হোসেন তার রাজনৈতিক দাম্ভিকতা, প্রভাব প্রতিপত্তি এবং বল প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। আমি এ বিষয়ে তার কাছে সুরাহা চাইলে সে আমার নিকট ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। এতে আমি ও আমার পরিবার মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমার পরিবারের নারী সদস্য ও সন্তানরা তৎকালীন এমপির কাছে আইনি সহযোগিতা চাইলে তিনি তার ব্যক্তিগত সহকারীকে বিষয়টি সুরাহার নির্দেশ দেন। কিন্তু বেলাল আমাদের পরিবারকে বিএনপি-জামায়াত বলে সব সহযোগিতার পথ বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ১০ লক্ষ টাকা দাবীকৃত চাঁদার প্রথম কিস্তি হিসেবে বেলালকে দেড় লক্ষ টাকা পরিশোধ করে কাজের বাধা দূর করি।
৫ আগস্ট বেলাল হোসেনের নেত্রী স্বৈরাচারী হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলে আমি আমার দেড় লাখ টাকা ফেরত চাই। কিন্তু গত ৩ সেপ্টেম্বর আমি তারুন্যের অহংকার তারেক রহমানের ভার্চুয়াল প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিতে চট্টগ্রাম শহরে গেলে আমার অনুপস্থিতির সুযোগে বেলাল হোসেন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মার্কেটে হামলা চালায়। হামলায় ভবনের সুয়ারেজ ও পানির পাইপ এবং ফিটিংসগুলো ভেঙ্গে ফেলে। এসময় বেলাল হোসেন আমাকে খোঁজাখুজি করে এবং উচ্চস্বরে আমাকে হত্যার হুমকিসহ যাবতীয় অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে। পরে আমি মার্কেটে এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি প্রত্যক্ষ করি। পরে বিভিন্ন দপ্তরের লিখিত অভিযোগ দিই। এতে বেলাল আমার উপর আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
আমি তার এই স্বৈরাচারী মনোভাব ও হিংস্রতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। তিনি আমার নিকট হতে গৃহীত চাঁদার টাকা ফেরত চাওয়ায় সেটিকে ও চাঁদাবাজি বলে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সীতাকুণ্ডবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।
বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন, প্রীতি স্টোরের বেলাল হোসেনের নৈরাজ্য, রাজনৈতিক দূর্বাওায়ন, ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির পদের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে সকলেই অবগত। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় সাধারণ সম্পাদকের পদ ভাগিয়ে নিয়ে ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সকল নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজ মনগড়া ব্যবস্থা চালু করেছেন তিনি। এই বেলাল স্বৈরাচারী হাসিনার একজন চিহ্নিত দোসর। গেল পাতানো ইউপি নির্বাচনেও চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্যও বটে।
ন্যায়বিচার দাবি করে শপিং কমপ্লেক্সের এই মালিক বলেন, আমি ইতিপূর্বে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে দেওয়া অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্ত, চাঁদার টাকা ফেরত ও বেলালের বিচার দাবি করছি।